আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।



"প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।"
মৃত্যু পরবর্তি জীবনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা বয়সের সাথে সাথে মনের ভেতর জেকে বসছে।

কুরআন শেখা ফরজ। তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয়, কুরআন পড়ে মর্মার্থ উপলব্ধি করা। এটা বাচ্চাদের শেখানো এবং নিজে শেখা ফরজ। এই ফরজ ঠিক-ঠাক মত আদায় করতে পারলে ইনশা আল্লাহ কুরআনের সমাজ গঠনের কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।

Saturday, September 6, 2014

সুরা ফাতিহা ২য় পাঠ


আমরা সুরা ফাতিহার ১ম আয়াতের ১ম শব্দ সম্পর্কে সাধারণভাবে জেনেছি। এখন ২য় শব্দ সম্পর্কে আলোচনা করি।
لِلَّـهِ - (লিল্লাহি) এখানে আসলে لِ+اللهِ আছে। লিল্লাহি অর্থ আল্লাহর জন্য। لِ অর্থ- জন্য। আরবিতে একে حرف جر(হরফে জার) বলে। এটি আসলে অব্যয়। সাধারণভাবে ১৯টি হরফে জার আছে। যেমন- بِ، تَ، كَ، لِ، وَ، مُنْذُ، مُذْ، خَلَا، رُبَّ، حاَشَ، مِنْ، عَادَ، فِيْ، عَنْ، عَلىَ، حَتّىَ، إلىَ، مَعَ، عِنْدَ،
(বা, তা, কাফ, লাম, ওয়াও, মুনজু, মুজ, খলা, রুব্বা, হাশা, মিন, আদা, ফি, আন, আলা, হাত্তা, ইলা, মাআ, ইনদা)। এ অব্যয় বা حرف (হরফ) শব্দের পূর্বে বসে এবং শব্দের শেষ হরফে (ـــــِــ) জের দেয়। এজন্য একে عامل(আমিল) বা إعراب (এরাব)(অর্থাৎ শব্দের শেষ হরফে জবর, জের, পেশ দেয়) প্রদানকারী বলে। আরবি ভাষায় এরকম প্রায় ১০০ আমিল আছে।
এ অব্যয়গুলো যে শব্দের আগে বসে, তার সাথে তার পূর্বের শব্দের সঙ্গে সম্মন্ধ তৈরি করে। যেমন-الْحَمْدُ لِلَّـهِ (আলহামদু লিল্লাহি) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। প্রশংসাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। এখানে আল্লাহ+এর মধ্যে "এর" বা "র" কে বাংলায় সম্মন্ধবাচক অব্যয় বলে। আরবিতে একে إضافة (এদাফাত) বলে। এদাফাত দু'ধরণের। এক. إضافة بالحرف(এদাফাত বিল হরফ) হরফের মাধ্যমে সম্মন্ধ করা। যেমন-হরফে জার, الْحَمْدُ لِلَّـهِ (আলহামদু লিল্লাহি) এখানে لِ (লি) এর মাধ্যমে আলহামদু ও আল্লাহ শব্দের মধ্যে সম্মন্ধ করা হয়েছে। দুই. إضافة بالكلمة (এদাফাত বিল কালিমা) দুই শব্দে সম্মন্ধ করা। এই সম্মন্ধ করার নিয়ম হচ্ছে- ১. প্রথম الكلمة (কালিমা) বা শব্দটি نكرة(নাকিরাহ) অর্থাৎ অনির্দিষ্ট হবে। যে শব্দের আগে الْ (আল) নেই তাকে নাকেরাহ বলে। দ্বিতীয় শব্দটি معرفة(মারিফাহ) অর্থাৎ নির্দিষ্ট হবে। যে শব্দের আগে الْ (আল) আছে তাকে মারিফাহ বলে। মারিফাহ শব্দটির শেষ হরফে (ـــــِــ) জের হবে। যেমন- قلمُ الْخطِّ (কলামুল খত্তি) ক্যালিগ্রাফির কলম। এখানে قلمُ (কলম) শব্দটি নাকিরাহ এবং الْخطِّ (আল+খত) শব্দটি মারিফাহ। এশব্দটির শেষ طِّ হরফে (ـــــِــ) জের হয়েছে। আবার كتابُ زيدٍ (কিতাবু যাইদিন) যায়েদের কিতাব বা বই। এখানে যায়িদ শব্দের শেষ دٍ হরফে দুই জের হয়েছে, যায়িদ শব্দের পূর্বে الْ (আল) না থাকার কারণে।
اللهِ- আল্লাহ শব্দটি আরবি ভাষাসহ সেমেটিক ভাষাগুলোতে পাওয়া যায়। এটি এমন একটি শব্দ যার স্ত্রী লিঙ্গ হয় না। এজন্য একে إسم ذات (ইসমি জাত) বা একক মৌলিক নামবাচক শব্দ বলে। উচ্চারণ করার সময় আল্লাহ শব্দের লাম হরফটির া-কারটি অ-এর মত একটু টেনে পড়তে হয়। যেমন- আল্ল+অ+হ কিন্তু আল্লাহ শব্দটির পূর্বে (ـــــِــ) জের থাকলে স্বাভাবিকভাবে পড়তে হয়। যেমন- লিল্লাহ। এখানে লিল্ল+অ+হ পড়া যাবেনা। এগুলো تجويد (তাজবিদ) অর্থাৎ উচ্চারণ নীতিমালার বিষয়। আপনারা কোন ক্বারী হুজুরের কাছে এটা সহজে শিখতে পারবেন। বাংলাদেশে এভাবে কুরআন তেলাওয়াত শেখার ব্যবস্থা শুধু আছে।
এ পাঠটি কয়েকবার ধীরস্থিরভাবে পড়ুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন। আশাকরি আল্লাহর মেহেরবানীতে এটা বুঝা সহজ হয়ে যাবে।

Sura Fatiha..সুরা ফাতিহা


নামাজে যে সুরাটি না পড়লে নামাজ হয়না সেটি হচ্ছে সুরা ফাতিহা। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হয়, এজন্য একে সুরাতুস সালাত বলা হয়।

এখানে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতাংশ আমরা শিখব। আয়াত হচ্ছে- الْحَمْدُ لِلَّـهِ رَ‌بِّ الْعَالَمِينَ (আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ'লামীন।)
অর্থ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, (যিনি) সমস্ত আলম(বিশ্ব)-এর রব বা প্রতিপালক।

الْحَمْدُ (আলহামদু)- الْ (আল) অর্থ সমস্ত, حَمْدُ (হামদু) অর্থ প্রশংসা। বাক্যের মধ্যে শব্দের শেষ হরফে (دُ) পেশ হলে সেটা কর্তৃবাচক বা فاعل (ফায়েল) বা উদ্দেশ্য বা مبتدا (মুবতাদা) হয়। এখানে শব্দের প্রথমে الْ(আল) আছে এবং শব্দের শেষের হরফে 'ু' আছে, এ শব্দটা ক্রিয়া বা فعل (ফেয়ল) নয় বরং নামবাচক শব্দ বা إسم (ইসিম) অথবা ক্রিয়ামূল বা إسم مصدر (ইসমি মাসদার) ধরা যায়, আবার এটা বিশেষন বা গুনবাচক শব্দ বা إسم صفة (ইসমি সিফাত)। সুতরাং এ "আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ'লামীন" বাক্যটিকে جملة إسمية (জুমলা ইসমিয়াহ) বা নামবাচক বাক্য বলা হয়।
আপনারা কুরআনে যেখানে الْحَمْدُ "আলহামদু" শব্দটি পাবেন, তার অর্থ "যাবতীয়/সমস্ত প্রশংসা" বলতে পারবেন।

الْ আল- শব্দটির কমপক্ষে দুটো অর্থ। এক. নির্দিষ্ট করা(টি,টা,খানা,খানী) দুই. সমস্ত বা যাবতীয়। "হামদ" শব্দের আগে الْ "আল" বসে, এর অর্থ করে- য়ত ধরনের প্রশংসা হতে পারে তা এতে প্রযোজ্য।

কুরআনে আরেক آل "আাাল" আছে, যার অর্থ- পরিবার, বংশ। যেমন- آل عمران আাালে ইমরান (ইমরানের পরিবার বা বংশ)। এই আালে শব্দের "আলিফে"র ওপর একটি ممدودة(মামদুদাহ) চিহ্ন আছে। এজন্য আলিফকে একটু টেনে উচ্চারণ করতে হয়।

এখন এপর্যন্ত। এটুকু ধীরস্থিরভাবে কয়েকবার পড়ুন এবং হৃদয়ে গেঁথে নিন। আশাকরি ভাল লাগবে, কুরআন পড়ার মজা অবশ্যই আগামিতে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

মহা সৌভাগ্যময়!!!


মহা সৌভাগ্যময় কিছু পেলে আপনার অনুভূতি কেমন হবে...

আমাদের আশে-পাশে অনেকেই আমেরিকার ডিভি লটারি পেয়েছেন। যিনি লটারি জিতেন, তার অনুভূতির প্রথম প্রকাশ হয়, প্রিয়জনসহ সবাইকে খবরটা জানানো। তারপর চলে প্রস্তুতি, কিভাবে ইংরেজি ভাষাটা দ্রুত আয়ত্ব করা যায়, আমেরিকার লোকজনের আচার-আচরণ চলা-ফেরা ইত্যাদি বিষয়ে ভাল করে জানার চেষ্টা চলে, সেখানে জীবন কিভাবে কাটাবে..এমন বহু বিষয়ে প্রস্তুতি চলে।

এভাবে মহা সৌভাগ্যময় কিছু আমাদের কাছে এলে তা নিয়ে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দেই।

আমরা হয়ত অনেকেই জানিনা যে এমনই একটি মহা সৌভাগ্যময় বিষয় আমাদের কাছে আছে..!

পবিত্র কুরআন হচ্ছে সেই মহা সৌভাগ্যময় কিতাব।
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَ‌كٌ لِّيَدَّبَّرُ‌وا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ‌ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿٢٩﴾
সুরা সোয়াদে (৩৮:২৯) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন-
" এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।"

আরবি শব্দ মুবারকের অর্থ হচ্ছে- মহা সৌভাগ্যময়।

সুতরাং এই কিতাবের বরকত পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই যা করতে হবে-
এক. এর আয়াতগুলো অনুধাবন করা
দুই. এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা
তিন. উপদেশ গ্রহন করা অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহন করা

প্রিয় বন্ধুরা,
এই মহা সৌভাগ্যবান কিতাবের সাথে আমাদের সম্পর্ক আসলে কেমন, তা একটু বুঝে নিই।

এক. সরাসরি।
কুরআন হচ্ছে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়া'লার বাণী। যখনই আপনি এটা শুনবেন বা তিলাওয়াত করবেন, মনে মনে অনুধাবন করবেন যে আল্লাহ আমাকে সরাসরি সম্মোধন করছেন। তিনি আমাকে দেখছেন আমি কিভাবে তার এই কথায় প্রভাবিত হচ্ছি।

দুই. ব্যক্তিগত
কুরআনের প্রতিটি আয়াত আমার জন্য। কখনো বলবেন না যে এই আয়াত কাফির, মুশরিক বা মুনাফিক এর জন্য। আমাকে দেখতে হবে এর মধ্যে আমার জন্য কি আছে?

তিন. পরিকল্পিত
প্রতিটি শস্যকণায় কারো না কারো খাওয়ার জন্য নির্ধারিত। একইভাবে প্রতিটি আয়াত কারো না কারো শ্রবন এবং তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত। এর সবই পরিকল্পিত।

চার. প্রাসঙ্গিক
কুরআন হচ্ছে একটি তাগিদ অথবা মনে করিয়ে দেয়া। তাই আল্লাহর তাগিদ হচ্ছে প্রাসঙ্গিক।

কুরআন পাঠের সময় আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত:

১. একাগ্রতা। পাঠের সময় আয়াত পরিপূর্ণ বুঝার জন্য পূর্ণ মনোযোগ দেয়া।যে শব্দ আপনি বুঝেন তা চিহ্নিত করুন।
২. অনুধাবন। কুরআন শেখার জন্য আপনার অঙ্গীকারকে তরতাজা করে তুলুন।যদি কোন আয়াত না বুঝেন তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা/এস্তেগফার চান।
৩. কল্পনা। আপনার কল্পনা শানিত করে তুলুন, বিশেষ করে কুরআন তেলাওয়াত বা সালাতে শ্রবন করার সময়। জান্নাত, জাহান্নাম, আল্লাহর নিদর্শন ইত্যাদি সম্পর্কে কল্পনা করুন আয়াতের মর্মার্থ অনুযায়ী।
৪. অনুভব। আপনার ভালবাসা, ভয়, সম্মান, কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি অনুভূতিকে ব্যবহার করুন, যখন এ সংক্রান্ত আয়াত শুনবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে এই মহা সৌভাগ্যময় কিতাবের বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।