আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।



"প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।"
মৃত্যু পরবর্তি জীবনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা বয়সের সাথে সাথে মনের ভেতর জেকে বসছে।

কুরআন শেখা ফরজ। তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয়, কুরআন পড়ে মর্মার্থ উপলব্ধি করা। এটা বাচ্চাদের শেখানো এবং নিজে শেখা ফরজ। এই ফরজ ঠিক-ঠাক মত আদায় করতে পারলে ইনশা আল্লাহ কুরআনের সমাজ গঠনের কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।

Monday, September 9, 2013

দরস- ছয়

Wa zakkir fa innaz zikra tanfaul muminin, 51:55, Style-Sulus Jali, Calligrapher-Unnown

তিন. শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করা।
আগের দরস দুটিতে পড়া এবং শিক্ষা গ্রহণ করা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতি নিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি এবং সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি।সচেতন হোক আর অবচেতনই হোক, কাজ করতে হলে সে বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের কোন বিকল্প যেমন নেই, তেমনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র যাই বলি না কেন শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করাটা রীতিসিদ্ধ বিষয়।

এথন আমরা দেখব এ বিষয়ে কুরআনে কী বলা হয়েছে।

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿البقرة: ١٢٩﴾

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (2:129)

রাসূল কী শিক্ষা দিবেন? তিনি কিতাব অর্থাৎ কুরআন শিক্ষা দিবেন এবং শিক্ষা দিবেন হিকমত (কোন বিষয়ের বাহ্যিক, আভ্যন্তরিন, তত্ত্বীয়, ব্যবহরিক এবং পারিপার্শ্বিক অর্থাৎ যথাযথ জ্ঞান)।
কেন শিক্ষা দিবেন? পবিত্র, পরিশুদ্ধ করার জন্য তিনি শিক্ষা দিবেন।

সুতরাং আমরা যে কাজ করব তাতে পরিশুদ্ধতা, পবিত্রতা উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّـهُ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّـهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّـهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ وَاتَّقُوا اللَّـهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّـهُ وَاللَّـهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٨٢

"হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।" (2:282)

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণে কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্য হোক কিম্বা সফরে বিপদ-সংকুল স্থানে সালাত আদায়ই হোক।

فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّـهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ﴿البقرة: ٢٣٩﴾
অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা পাবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না। (2:239)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের কাজ দেখবেন। রাসূল সা. এবং মুমিনগণও দেখবেন।

{وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ} [التوبة:105
আর তুমি বলে দাও, তোমরা আমল করে যাও, তার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রসূল ও মুসলমানগণ। তাছাড়া তোমরা শীগ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে। (9:105)

رقم الحديث: 128
(حديث مرفوع) " اعْمَلُوا بِالْقُرْآنِ أَحِلُّوا حَلالَهُ . . . " الْحَدِيثَ . وَفِيهِ : مَا تَشَابَهَ عَلَيْكُمْ مِنْهُ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى أُولِي الْعِلْمِ مِنْ بَعْدِي يُخْبِرُونَكُمْ " . رَوَاهُ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي حُمَيْدٍ ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ ، عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ . وَعُبَيْدُ اللَّهِ كَذَّابٌ .

হাদিসে বলা হয়েছে- তোমরা কুরআন অনুযায়ী কাজ কর, কেননা তাতে সহজ সমাধান করে দেয়া হয়েছে।
এ হাদিসে আরো বলা হয়েছে- যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় তবে সে বিষয়ে আল্লাহর কাছে অর্থাৎ কুরআনে এবং আমার পরে জ্ঞানীদের কাছে যাবে..তাহলে সেখানে সমাধান পাবে।

সুতরাং আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়, কাজ করাটা কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী হতে হবে।

এখন দেখব কুরআনে আর কী বলা হয়েছে।

আমরা জানি কুরআনের আরেক নাম যিকর (الذكر) অর্থাৎ বার বার স্মরণ করা, শিক্ষা গ্রহণ করা।

{وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ المُؤْمِنِينَ}
[سورة الذاريات: 55]
"এবং আপনি কুরআনের শিক্ষা দিতে থাকুন। কেননা কুরআনের শিক্ষা মুমিনদের উপকারে আসবে।" (৫১:৫৫)







 إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّـهُ وَاذْكُر‌ رَّ‌بَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَىٰ أَن يَهْدِيَنِ رَ‌بِّي لِأَقْرَ‌بَ مِنْ هَـٰذَا رَ‌شَدًا ﴿الكهف: ٢٤﴾
 ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন। (১৮:২৪)


وَمَنْ أَعْرَ‌ضَ عَن ذِكْرِ‌ي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُ‌هُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ﴿طه: ١٢٤

এবং যে আমার স্মরণ অর্থাৎ কুরআনের শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (২০:১২৪)








কুরআন শেখা ফরজ এবং এ ফরজ আদায় করলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে তা কিছুটা হলেও আলোচনা করা হয়েছে এবং কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালনা না করলে কি পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তাও আমরা জেনেছি।

আজ এ পর্যন্ত। এর পরের দরসে আমরা কুরআনের রেওয়ায়েত এবং কেরায়াত সম্পর্কে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ তায়ালা।