আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।



"প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।"
মৃত্যু পরবর্তি জীবনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা বয়সের সাথে সাথে মনের ভেতর জেকে বসছে।

কুরআন শেখা ফরজ। তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয়, কুরআন পড়ে মর্মার্থ উপলব্ধি করা। এটা বাচ্চাদের শেখানো এবং নিজে শেখা ফরজ। এই ফরজ ঠিক-ঠাক মত আদায় করতে পারলে ইনশা আল্লাহ কুরআনের সমাজ গঠনের কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।

Saturday, July 27, 2013

দরস- চার


Iqra, Thuluth style




এক. পড়া,

দুই. শিক্ষা গ্রহণ করা এবং

তিন. সে অনুযায়ী কাজ করা।



এ তিনটি বিষয় এতটাই গুরুত্ববহ যে একে অবহেলা করলে আপনার জীবন পদে পদে বিপদে পড়বে এবং জীবনের শান্তি বলে কিছু থাকবে না।



আসুন! দেখি, কুরআন আমাদের এ বিষয়ে কী শিক্ষা দেয়।

  
Iqra, Thuluth, Mirror style, Calligrapher- Othman


এক. পড়া। কুরআনের নাযিলের প্রথম শব্দটি ছিল- "পড়"। আরবিতে শব্দটি হচ্ছে- ইকরা (إقرأ)। এটা মুসলিম হিসেবে আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু বাংলাভাষী হিসেবে এ শব্দটির বিধান সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই বেখবর এবং বেখেয়াল। তা নাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান আজ কুরআন পড়ে বুঝতেন।



একটা ছোট্ট ঘটনা বলি- আমার এক শ্রদ্ধেয় উস্তাদ তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরছেন। উনার পাশে দু'সিটে টিনেজ মেয়ে বসেছে। উড্ডয়নের পর মেয়ে দু'জন তাদের হাতব্যাগ থেকে কুরআন বের করে পড়তে লাগল। কিছুক্ষণ পরে তিনি খেয়াল করলেন মেয়ে দু'টি কুরআন পড়ছে আর কাঁদছে। তিনি বিস্মিত হলেন। কারণ এ দু'মেয়ের মাতৃভাষা তুর্কী এবং এ ভাষার সাথে আরবি, বিশেষ করে কুরআনের ভাষার সম্পর্ক তেমন নেই। কুরআনের ভাষা শেখা ছাড়া একজন তুর্কীর পক্ষে কুরআন বুঝা সম্ভব নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কান্না সম্পর্কে। তারা জানালো ছোটবেলায় তারা কুরআন শিখেছে, তাই কুরআনের বানী তাদের কাঁদাচ্ছে। অর্থাৎ কুরআনের ভাষা তারা ছোটবেলায় শিখেছে।



ওস্তাদের তখন খুব দুঃখবোধ হতে লাগল এই ভেবে, বাংলাদেশের মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু কী পড়ে তা জানে না, তাই কুরআন তাদের কোনো কাজে লাগে না। এসব কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন আর আফসোস করেছিলেন।



বায়তুল মোকাররমে ইসলামী কিতাবের মেলা হয়। ওস্তাদের ঐ ঘটনার পর একদিন মেলায় গেলাম এবং প্রত্যেকটি স্টলে কুরআন শেখার বই চাইলাম। সবাই আমাকে সহীহ নুরানী তেলাওয়াত শেখার বই ধরিয়ে দিলেন। আমি ইংরেজী শেখার বইয়ের কথা বললে, তাদের মধ্যে মাত্র একজন দোকানদার ছাড়া কেউ আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন নাই। আমি সেদিন এতটাই দুঃখিত আর বিচলিত বোধ করি যে দ্রুত মসজিদের ভেতর গিয়ে বসে পড়ি এবং আমার কান্না পেতে থাকে।



Iqra bismi rabbika, Thuluth style, Calligrapher- Hamed Amedi


প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ আমাদের জন্য সর্বপ্রথম কোন নির্দেশটি দিয়েছেন কুরআন নাযিলের মাধ্যমে। আমরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের কথা জানি। বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক পড়ে রিচ্যুয়ালগুলো আদায় করি কিন্তু কুরআন পড়ে বুঝি না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের প্রথম নির্দেশ দিয়েছেন - "পড়!" এবং এই পড়াটা কোন পদ্ধতি বা নিয়মে হবে তাও উল্লেখ করেছেন। সেটা হচ্ছে, "তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।"



আমরা বলি, পড়তে পারলে ত বুঝবে! অর্থাৎ- পড়া মানেই বোধগম্য হওয়ার বিষয়টি এসে যায়। কিন্তু কুরআন পড়ার ব্যাপারে কেন উল্টা ভাবি। আজ আমাদের শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাই কুরআন পড়ার অর্থ কুরআন তেলাওয়াত(না বুঝে উচ্চারণ করা) ভাবেন। অথচ কুরআন তেলাওয়াত করা মানে যে বোধগম্যতার বিষয় রয়েছে তাও বুঝেন না।



কুরআনে আমর(أمر) অর্থাৎ আদেশ এবং নাহি(نهي) অর্থাৎ নিষেধ বাচক শব্দ আছে, সেগুলোর বিধান হচ্ছে- ফরজ(فرض) অর্থাৎ- অবশ্য পালনীয়।



ইকরা (إقرأ) শব্দটি আমরের ছিগা(صغة)। আরবি ব্যকরণ অনুযায়ী একে- আমর হাদের(حاضر) মারুফ(معروف) এর একবচন ছিগা বা মধ্যম পুরুষ আদেশ বাচক অধ্যায়ের একবচনের একটি রূপ(ছিগা)। এখানে "পড়া"(قرأ) মূল ক্রিয়ারূপের পরিবর্তন হয়ে আদেশ বাচক অধ্যায়(বহছ بحث) আমর হয়ে আদেশবাচক অর্থ করবে- পড়।



সুতরাং নামাজ কায়েম করা যেমন ফরজ। যাকাত আদায় করা, রমাদানের সিয়াম আদায় করা এবং সামর্থবানদের হজ আদায় করা ফরজের মত "আল্লাহর নামে পড়া"ও ফরজ।



কুরআনে আল্লাহ আদেশ করছেন-

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

سورة العنكبوت - الآية 45

 "কিতাব থেকে তোমার প্রতি যা অহি করা হয়েছে, তা তেলাওয়াত কর অর্থাৎ পড় এবং সালাত(নামাজ) কায়েম(প্রতিষ্ঠা) কর। নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে।..."

  


اتْلُ(উতলু) অর্থাৎ তেলাওয়াত কর বা পড়। এটি আমরের ছিগা।

أَقِمِ(আকিম) অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা কর। এটি আমরের ছিগা।



কুরআনে যে শব্দটি আগে আসে, সেটির বিধানের কার্যকারিতাও আগে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহি নাযিলের সাথে সাথে তা বারংবার তেলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদের মাধ্যমে লিখে রাখতেন। রাসূলের এই অধিক সতর্কতামূলক তেলাওয়াতের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আদেশ দিলেন-



لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ (16) إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ (17) فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ

القيامة ১৬-১৮ আয়াত।



"আপনি তাড়াহুড়া করে আপনার জিহবাকে নাড়াবেন না। উহাকে(কুরআনকে) একত্রিত করা এবং পাঠের ব্যবস্থা করা আমার(আল্লাহর) দায়িত্ব। যখন আপনি কুরআন পড়বেন তখনই(সাথে সাথে) পাঠটি অনুসরন করুন।"



এখানেও আমর এবং নাহির ছিগা আছে।

আশা করি কুরআন পড়ার ফরজ বিষয়টি বুঝাতে পেরেছি , ইনশা আল্লাহ।

No comments:

Post a Comment