আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।



"প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।"
মৃত্যু পরবর্তি জীবনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা বয়সের সাথে সাথে মনের ভেতর জেকে বসছে।

কুরআন শেখা ফরজ। তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয়, কুরআন পড়ে মর্মার্থ উপলব্ধি করা। এটা বাচ্চাদের শেখানো এবং নিজে শেখা ফরজ। এই ফরজ ঠিক-ঠাক মত আদায় করতে পারলে ইনশা আল্লাহ কুরআনের সমাজ গঠনের কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।

Saturday, September 6, 2014

সুরা ফাতিহা ২য় পাঠ


আমরা সুরা ফাতিহার ১ম আয়াতের ১ম শব্দ সম্পর্কে সাধারণভাবে জেনেছি। এখন ২য় শব্দ সম্পর্কে আলোচনা করি।
لِلَّـهِ - (লিল্লাহি) এখানে আসলে لِ+اللهِ আছে। লিল্লাহি অর্থ আল্লাহর জন্য। لِ অর্থ- জন্য। আরবিতে একে حرف جر(হরফে জার) বলে। এটি আসলে অব্যয়। সাধারণভাবে ১৯টি হরফে জার আছে। যেমন- بِ، تَ، كَ، لِ، وَ، مُنْذُ، مُذْ، خَلَا، رُبَّ، حاَشَ، مِنْ، عَادَ، فِيْ، عَنْ، عَلىَ، حَتّىَ، إلىَ، مَعَ، عِنْدَ،
(বা, তা, কাফ, লাম, ওয়াও, মুনজু, মুজ, খলা, রুব্বা, হাশা, মিন, আদা, ফি, আন, আলা, হাত্তা, ইলা, মাআ, ইনদা)। এ অব্যয় বা حرف (হরফ) শব্দের পূর্বে বসে এবং শব্দের শেষ হরফে (ـــــِــ) জের দেয়। এজন্য একে عامل(আমিল) বা إعراب (এরাব)(অর্থাৎ শব্দের শেষ হরফে জবর, জের, পেশ দেয়) প্রদানকারী বলে। আরবি ভাষায় এরকম প্রায় ১০০ আমিল আছে।
এ অব্যয়গুলো যে শব্দের আগে বসে, তার সাথে তার পূর্বের শব্দের সঙ্গে সম্মন্ধ তৈরি করে। যেমন-الْحَمْدُ لِلَّـهِ (আলহামদু লিল্লাহি) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। প্রশংসাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। এখানে আল্লাহ+এর মধ্যে "এর" বা "র" কে বাংলায় সম্মন্ধবাচক অব্যয় বলে। আরবিতে একে إضافة (এদাফাত) বলে। এদাফাত দু'ধরণের। এক. إضافة بالحرف(এদাফাত বিল হরফ) হরফের মাধ্যমে সম্মন্ধ করা। যেমন-হরফে জার, الْحَمْدُ لِلَّـهِ (আলহামদু লিল্লাহি) এখানে لِ (লি) এর মাধ্যমে আলহামদু ও আল্লাহ শব্দের মধ্যে সম্মন্ধ করা হয়েছে। দুই. إضافة بالكلمة (এদাফাত বিল কালিমা) দুই শব্দে সম্মন্ধ করা। এই সম্মন্ধ করার নিয়ম হচ্ছে- ১. প্রথম الكلمة (কালিমা) বা শব্দটি نكرة(নাকিরাহ) অর্থাৎ অনির্দিষ্ট হবে। যে শব্দের আগে الْ (আল) নেই তাকে নাকেরাহ বলে। দ্বিতীয় শব্দটি معرفة(মারিফাহ) অর্থাৎ নির্দিষ্ট হবে। যে শব্দের আগে الْ (আল) আছে তাকে মারিফাহ বলে। মারিফাহ শব্দটির শেষ হরফে (ـــــِــ) জের হবে। যেমন- قلمُ الْخطِّ (কলামুল খত্তি) ক্যালিগ্রাফির কলম। এখানে قلمُ (কলম) শব্দটি নাকিরাহ এবং الْخطِّ (আল+খত) শব্দটি মারিফাহ। এশব্দটির শেষ طِّ হরফে (ـــــِــ) জের হয়েছে। আবার كتابُ زيدٍ (কিতাবু যাইদিন) যায়েদের কিতাব বা বই। এখানে যায়িদ শব্দের শেষ دٍ হরফে দুই জের হয়েছে, যায়িদ শব্দের পূর্বে الْ (আল) না থাকার কারণে।
اللهِ- আল্লাহ শব্দটি আরবি ভাষাসহ সেমেটিক ভাষাগুলোতে পাওয়া যায়। এটি এমন একটি শব্দ যার স্ত্রী লিঙ্গ হয় না। এজন্য একে إسم ذات (ইসমি জাত) বা একক মৌলিক নামবাচক শব্দ বলে। উচ্চারণ করার সময় আল্লাহ শব্দের লাম হরফটির া-কারটি অ-এর মত একটু টেনে পড়তে হয়। যেমন- আল্ল+অ+হ কিন্তু আল্লাহ শব্দটির পূর্বে (ـــــِــ) জের থাকলে স্বাভাবিকভাবে পড়তে হয়। যেমন- লিল্লাহ। এখানে লিল্ল+অ+হ পড়া যাবেনা। এগুলো تجويد (তাজবিদ) অর্থাৎ উচ্চারণ নীতিমালার বিষয়। আপনারা কোন ক্বারী হুজুরের কাছে এটা সহজে শিখতে পারবেন। বাংলাদেশে এভাবে কুরআন তেলাওয়াত শেখার ব্যবস্থা শুধু আছে।
এ পাঠটি কয়েকবার ধীরস্থিরভাবে পড়ুন এবং বুঝতে চেষ্টা করুন। আশাকরি আল্লাহর মেহেরবানীতে এটা বুঝা সহজ হয়ে যাবে।

Sura Fatiha..সুরা ফাতিহা


নামাজে যে সুরাটি না পড়লে নামাজ হয়না সেটি হচ্ছে সুরা ফাতিহা। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হয়, এজন্য একে সুরাতুস সালাত বলা হয়।

এখানে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতাংশ আমরা শিখব। আয়াত হচ্ছে- الْحَمْدُ لِلَّـهِ رَ‌بِّ الْعَالَمِينَ (আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ'লামীন।)
অর্থ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, (যিনি) সমস্ত আলম(বিশ্ব)-এর রব বা প্রতিপালক।

الْحَمْدُ (আলহামদু)- الْ (আল) অর্থ সমস্ত, حَمْدُ (হামদু) অর্থ প্রশংসা। বাক্যের মধ্যে শব্দের শেষ হরফে (دُ) পেশ হলে সেটা কর্তৃবাচক বা فاعل (ফায়েল) বা উদ্দেশ্য বা مبتدا (মুবতাদা) হয়। এখানে শব্দের প্রথমে الْ(আল) আছে এবং শব্দের শেষের হরফে 'ু' আছে, এ শব্দটা ক্রিয়া বা فعل (ফেয়ল) নয় বরং নামবাচক শব্দ বা إسم (ইসিম) অথবা ক্রিয়ামূল বা إسم مصدر (ইসমি মাসদার) ধরা যায়, আবার এটা বিশেষন বা গুনবাচক শব্দ বা إسم صفة (ইসমি সিফাত)। সুতরাং এ "আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ'লামীন" বাক্যটিকে جملة إسمية (জুমলা ইসমিয়াহ) বা নামবাচক বাক্য বলা হয়।
আপনারা কুরআনে যেখানে الْحَمْدُ "আলহামদু" শব্দটি পাবেন, তার অর্থ "যাবতীয়/সমস্ত প্রশংসা" বলতে পারবেন।

الْ আল- শব্দটির কমপক্ষে দুটো অর্থ। এক. নির্দিষ্ট করা(টি,টা,খানা,খানী) দুই. সমস্ত বা যাবতীয়। "হামদ" শব্দের আগে الْ "আল" বসে, এর অর্থ করে- য়ত ধরনের প্রশংসা হতে পারে তা এতে প্রযোজ্য।

কুরআনে আরেক آل "আাাল" আছে, যার অর্থ- পরিবার, বংশ। যেমন- آل عمران আাালে ইমরান (ইমরানের পরিবার বা বংশ)। এই আালে শব্দের "আলিফে"র ওপর একটি ممدودة(মামদুদাহ) চিহ্ন আছে। এজন্য আলিফকে একটু টেনে উচ্চারণ করতে হয়।

এখন এপর্যন্ত। এটুকু ধীরস্থিরভাবে কয়েকবার পড়ুন এবং হৃদয়ে গেঁথে নিন। আশাকরি ভাল লাগবে, কুরআন পড়ার মজা অবশ্যই আগামিতে পাবেন, ইনশা আল্লাহ।

মহা সৌভাগ্যময়!!!


মহা সৌভাগ্যময় কিছু পেলে আপনার অনুভূতি কেমন হবে...

আমাদের আশে-পাশে অনেকেই আমেরিকার ডিভি লটারি পেয়েছেন। যিনি লটারি জিতেন, তার অনুভূতির প্রথম প্রকাশ হয়, প্রিয়জনসহ সবাইকে খবরটা জানানো। তারপর চলে প্রস্তুতি, কিভাবে ইংরেজি ভাষাটা দ্রুত আয়ত্ব করা যায়, আমেরিকার লোকজনের আচার-আচরণ চলা-ফেরা ইত্যাদি বিষয়ে ভাল করে জানার চেষ্টা চলে, সেখানে জীবন কিভাবে কাটাবে..এমন বহু বিষয়ে প্রস্তুতি চলে।

এভাবে মহা সৌভাগ্যময় কিছু আমাদের কাছে এলে তা নিয়ে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দেই।

আমরা হয়ত অনেকেই জানিনা যে এমনই একটি মহা সৌভাগ্যময় বিষয় আমাদের কাছে আছে..!

পবিত্র কুরআন হচ্ছে সেই মহা সৌভাগ্যময় কিতাব।
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَ‌كٌ لِّيَدَّبَّرُ‌وا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ‌ أُولُو الْأَلْبَابِ ﴿٢٩﴾
সুরা সোয়াদে (৩৮:২৯) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন-
" এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।"

আরবি শব্দ মুবারকের অর্থ হচ্ছে- মহা সৌভাগ্যময়।

সুতরাং এই কিতাবের বরকত পেতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই যা করতে হবে-
এক. এর আয়াতগুলো অনুধাবন করা
দুই. এটা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা
তিন. উপদেশ গ্রহন করা অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহন করা

প্রিয় বন্ধুরা,
এই মহা সৌভাগ্যবান কিতাবের সাথে আমাদের সম্পর্ক আসলে কেমন, তা একটু বুঝে নিই।

এক. সরাসরি।
কুরআন হচ্ছে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়া'লার বাণী। যখনই আপনি এটা শুনবেন বা তিলাওয়াত করবেন, মনে মনে অনুধাবন করবেন যে আল্লাহ আমাকে সরাসরি সম্মোধন করছেন। তিনি আমাকে দেখছেন আমি কিভাবে তার এই কথায় প্রভাবিত হচ্ছি।

দুই. ব্যক্তিগত
কুরআনের প্রতিটি আয়াত আমার জন্য। কখনো বলবেন না যে এই আয়াত কাফির, মুশরিক বা মুনাফিক এর জন্য। আমাকে দেখতে হবে এর মধ্যে আমার জন্য কি আছে?

তিন. পরিকল্পিত
প্রতিটি শস্যকণায় কারো না কারো খাওয়ার জন্য নির্ধারিত। একইভাবে প্রতিটি আয়াত কারো না কারো শ্রবন এবং তিলাওয়াতের জন্য নির্ধারিত। এর সবই পরিকল্পিত।

চার. প্রাসঙ্গিক
কুরআন হচ্ছে একটি তাগিদ অথবা মনে করিয়ে দেয়া। তাই আল্লাহর তাগিদ হচ্ছে প্রাসঙ্গিক।

কুরআন পাঠের সময় আমাদের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত:

১. একাগ্রতা। পাঠের সময় আয়াত পরিপূর্ণ বুঝার জন্য পূর্ণ মনোযোগ দেয়া।যে শব্দ আপনি বুঝেন তা চিহ্নিত করুন।
২. অনুধাবন। কুরআন শেখার জন্য আপনার অঙ্গীকারকে তরতাজা করে তুলুন।যদি কোন আয়াত না বুঝেন তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা/এস্তেগফার চান।
৩. কল্পনা। আপনার কল্পনা শানিত করে তুলুন, বিশেষ করে কুরআন তেলাওয়াত বা সালাতে শ্রবন করার সময়। জান্নাত, জাহান্নাম, আল্লাহর নিদর্শন ইত্যাদি সম্পর্কে কল্পনা করুন আয়াতের মর্মার্থ অনুযায়ী।
৪. অনুভব। আপনার ভালবাসা, ভয়, সম্মান, কৃতজ্ঞতা ইত্যাদি অনুভূতিকে ব্যবহার করুন, যখন এ সংক্রান্ত আয়াত শুনবেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে এই মহা সৌভাগ্যময় কিতাবের বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

Monday, April 21, 2014

Who we are?

 Please take this fantastic trip in the attached file......................We are in the universe & the universe is within us .........................its all the same system guided & designed by HIM

Subhanallahi wa bi'hamdihi subhanallahil azim..


Allahu akbar

Monday, September 9, 2013

দরস- ছয়

Wa zakkir fa innaz zikra tanfaul muminin, 51:55, Style-Sulus Jali, Calligrapher-Unnown

তিন. শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করা।
আগের দরস দুটিতে পড়া এবং শিক্ষা গ্রহণ করা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা দৈনন্দিন জীবনে প্রতি নিয়ত শিক্ষা গ্রহণ করে থাকি এবং সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি।সচেতন হোক আর অবচেতনই হোক, কাজ করতে হলে সে বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণের কোন বিকল্প যেমন নেই, তেমনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র যাই বলি না কেন শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করাটা রীতিসিদ্ধ বিষয়।

এথন আমরা দেখব এ বিষয়ে কুরআনে কী বলা হয়েছে।

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ ﴿البقرة: ١٢٩﴾

হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করুণ যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা। (2:129)

রাসূল কী শিক্ষা দিবেন? তিনি কিতাব অর্থাৎ কুরআন শিক্ষা দিবেন এবং শিক্ষা দিবেন হিকমত (কোন বিষয়ের বাহ্যিক, আভ্যন্তরিন, তত্ত্বীয়, ব্যবহরিক এবং পারিপার্শ্বিক অর্থাৎ যথাযথ জ্ঞান)।
কেন শিক্ষা দিবেন? পবিত্র, পরিশুদ্ধ করার জন্য তিনি শিক্ষা দিবেন।

সুতরাং আমরা যে কাজ করব তাতে পরিশুদ্ধতা, পবিত্রতা উদ্দেশ্য থাকতে হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّـهُ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّـهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّـهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ وَاتَّقُوا اللَّـهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّـهُ وَاللَّـهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٨٢

"হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ঋনের আদান-প্রদান কর, তখন তা লিপিবদ্ধ করে নাও এবং তোমাদের মধ্যে কোন লেখক ন্যায়সঙ্গতভাবে তা লিখে দেবে; লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। আল্লাহ তাকে যেমন শিক্ষা দিয়েছেন, তার উচিত তা লিখে দেয়া। এবং ঋন গ্রহীতা যেন লেখার বিষয় বলে দেয় এবং সে যেন স্বীয় পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও বেশ কম না করে। অতঃপর ঋণগ্রহীতা যদি নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা নিজে লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে অক্ষম হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখাবে। দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা তোমাদের পক্ষে পাপের বিষয়। আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন।" (2:282)

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনাচরণে কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে হবে, সেটা ব্যবসা-বাণিজ্য হোক কিম্বা সফরে বিপদ-সংকুল স্থানে সালাত আদায়ই হোক।

فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّـهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ﴿البقرة: ٢٣٩﴾
অতঃপর যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয় থাকে, তাহলে পদচারী অবস্থাতেই পড়ে নাও অথবা সওয়ারীর উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা পাবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর, যেভাবে তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা ইতিপূর্বে জানতে না। (2:239)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদের কাজ দেখবেন। রাসূল সা. এবং মুমিনগণও দেখবেন।

{وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ} [التوبة:105
আর তুমি বলে দাও, তোমরা আমল করে যাও, তার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রসূল ও মুসলমানগণ। তাছাড়া তোমরা শীগ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে। (9:105)

رقم الحديث: 128
(حديث مرفوع) " اعْمَلُوا بِالْقُرْآنِ أَحِلُّوا حَلالَهُ . . . " الْحَدِيثَ . وَفِيهِ : مَا تَشَابَهَ عَلَيْكُمْ مِنْهُ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَإِلَى أُولِي الْعِلْمِ مِنْ بَعْدِي يُخْبِرُونَكُمْ " . رَوَاهُ عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي حُمَيْدٍ ، عَنْ أَبِي الْمَلِيحِ ، عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ . وَعُبَيْدُ اللَّهِ كَذَّابٌ .

হাদিসে বলা হয়েছে- তোমরা কুরআন অনুযায়ী কাজ কর, কেননা তাতে সহজ সমাধান করে দেয়া হয়েছে।
এ হাদিসে আরো বলা হয়েছে- যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় তবে সে বিষয়ে আল্লাহর কাছে অর্থাৎ কুরআনে এবং আমার পরে জ্ঞানীদের কাছে যাবে..তাহলে সেখানে সমাধান পাবে।

সুতরাং আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়, কাজ করাটা কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী হতে হবে।

এখন দেখব কুরআনে আর কী বলা হয়েছে।

আমরা জানি কুরআনের আরেক নাম যিকর (الذكر) অর্থাৎ বার বার স্মরণ করা, শিক্ষা গ্রহণ করা।

{وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ المُؤْمِنِينَ}
[سورة الذاريات: 55]
"এবং আপনি কুরআনের শিক্ষা দিতে থাকুন। কেননা কুরআনের শিক্ষা মুমিনদের উপকারে আসবে।" (৫১:৫৫)







 إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّـهُ وَاذْكُر‌ رَّ‌بَّكَ إِذَا نَسِيتَ وَقُلْ عَسَىٰ أَن يَهْدِيَنِ رَ‌بِّي لِأَقْرَ‌بَ مِنْ هَـٰذَا رَ‌شَدًا ﴿الكهف: ٢٤﴾
 ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন এবং বলুনঃ আশা করি আমার পালনকর্তা আমাকে এর চাইতেও নিকটতম সত্যের পথ নির্দেশ করবেন। (১৮:২৪)


وَمَنْ أَعْرَ‌ضَ عَن ذِكْرِ‌ي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُ‌هُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ﴿طه: ١٢٤

এবং যে আমার স্মরণ অর্থাৎ কুরআনের শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। (২০:১২৪)








কুরআন শেখা ফরজ এবং এ ফরজ আদায় করলে কি কি উপকার পাওয়া যাবে তা কিছুটা হলেও আলোচনা করা হয়েছে এবং কুরআনের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের জীবন পরিচালনা না করলে কি পরিস্থিতির শিকার হতে হবে তাও আমরা জেনেছি।

আজ এ পর্যন্ত। এর পরের দরসে আমরা কুরআনের রেওয়ায়েত এবং কেরায়াত সম্পর্কে আলোচনা করবো, ইনশা আল্লাহ তায়ালা।

Tuesday, July 30, 2013

দরস- পাঁচ

Allamal insana malam yalam, Thuluth style

দুই. শিক্ষা গ্রহণ করা

শিক্ষা এমনই একটি বিষয় যা জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, জ্ঞান ছাড়া আপনার চলা সম্ভব নয়। জ্ঞান আহরণ করাকে শিক্ষা বলা হয়। এটা আমরা জানি। জ্ঞান কার কাছ থেকে এসেছে?

জ্ঞানের আরবি শব্দ হচ্ছে- علم (ইলম)।

কুরআনে বলা হয়েছে,   فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا " অতঃপর তিনি(আল্লাহ) জানেন যা তোমরা জান না।।" সুরা ফাতহ-২৭

عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ "তিনি (আল্লাহ) শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।" সুরা আলাক-৫

জ্ঞান কার কাছ থেকে এসেছে, তার জবাব পাওয়া গেল।

আমরা এবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করব, আসলে জ্ঞানের বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আর কি বলেছেন!   

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে খালিফা বা প্রতিনিধি পাঠাবেন, এজন্য ফিরিশতাদেরকে সেটা জানালেন। ফিরিশতারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে (জ্বীন জাতি পৃথিবীতে যে কর্মকান্ড করেছিল) মন্তব্য করল, তারা বিপর্যয় করবে, রক্তপাত ঘটাবে অর্থাৎ খালিফার দায়িত্ব তারা ঠিকমত পালন করবে না। এবং ফিরিশতারা যে দায়িত্ব পেয়েছে তা ঠিকমত পালন করছে। সুতরাং নতুন খালিফা পাঠানোর কি কারণ থাকতে পারে? কিন্তু আল্লাহ বললেন-  إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ (নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না) সুরা বাকারা-৩০

এরপর আসল বিষয়টি আমরা দেখতে পাবো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জ্ঞানের বিষয়ে কী বলছেন-
وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا (আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম।) সুরা বাকারা-৩১

 এ আয়াতে একটি রহস্যের উন্মোচন করা হয়েছে। জ্ঞান হচ্ছে, প্রতিটি বস্তুর সম্যক পরিচিতি।

الأَسْمَاء (আল আসমা) শব্দটি বহুবচন, এর অর্থ নাম সমূহ। একবচন- إسم (ইসম) অর্থাৎ নাম।

আল্লাহ তায়ালা আদমকে নাম সমূহ শেখালেন। কিন্তু كُلَّهَا কেন বললেন? এখানেই আমাদের ভাবনার বিষয় রয়েছে।

كُلَّهَا এ শব্দের দুটো অংশ كُلَّ+هَا এর আক্ষরিক অর্থ- উহার(নাম সমূহের) প্রতিটি। আসলে এর অর্থ হচ্ছে- বিস্তারিত, পুঙ্খানুপুঙ্খ। যাকে আমরা বলি- এ টু জেড।

এখন গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের জিন কোড হচ্ছে তথ্য ভান্ডার। এটা কে দিল? আপনারা জবাব পেয়েছেন নিশ্চয়ই।

আরেকটু খোলাশা করা যাক। আল্লাহ তায়ালা আদমকে বিস্তারিত জ্ঞান শেখানোর পর ফিরিশতাদের কাছে তাকে পাঠালেন এবং কিছু বিষয়ের তথ্য চাইলেন। ফিরিশতারা কি বলল?

قَالُواْ سُبْحَانَكَ لاَ عِلْمَ لَنَا إِلاَّ مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ "তারা(ফিরিশতারা) বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।" সুরা বাকারা-৩২

অর্থাৎ- আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের মূল উৎস।

জ্ঞান আহরণের জন্য কোথায় যেতে হবে তা জানা হল।
 

Allamal insana malam yalam, Thuluth style


এবার একটু ভিন্ন বিষয় আলোচনা করা যাক, আরবি ভাষায় كلمة (কালিমা) শব্দ তিন প্রকার।

এক. إسم (ইসম) নাম বা বিশেষ্য বাচক।
দুই. فعل (ফিয়ল) ক্রিয়া বাচক।
তিন. حرف (হরফ) অব্যয় বাচক।

ইসম এরাব গ্রহণ করার দিক দিয়ে দু'রকম।
এক. معرب  (মুরাব), যে শব্দের প্রথমে আমেল আসার কারণে শব্দটির শেষ হরফে এরাবে পরিবর্তন হয়। এ বিষয়ে কিছু আলোচনা দরস দুই-এ আছে।
দুই.  مبني (মাবনি) এরাব পরিবর্তন হয় না।

ফিয়লও অনুরূপ। তবে হরফ হচ্ছে মাবনি।

এ দরসে আমরা ইলম থেকে অনেকগুলো শব্দ পেয়েছি।
এক. ক্রিয়া বাচক শব্দ عَلِمَ (আলিমা) অর্থ- তিনি জানেন।    এটি سمع-يسمع (সামিয়া-ইয়াসমাউ) বাব থেকে এসেছে। সিগাহ- واحد مذكر غائب (ওয়াহিদ মুযাক্কার গায়িব) এক বচন পুরুষ লিঙ্গ নাম পুরুষ। বহছ- فعل ماضي معروف (ফিয়ল মাদ্বি মারুফ) অতীতকাল কর্তৃবাচক ক্রিয়া। জিনস- সহিহ।

আপনারা এবিষয়ে আরো জানতে চাইলে "মিজানুস সরফ" নামক বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। এখন এ ধরণের ব্যাকরণ বিষয়ক সব বই বাংলায় অনুবাদ পাওয়া যায়।

দুই. لَمْ تَعْلَمُوا (লাম তা'লামু) অর্থ- তোমরা জানো না। সিগাহ- جمع مذكر حاضر (জাময়া মুযাক্কার হাদির) বহুবচন মধ্যম পুরুষ পুং লিঙ্গ। বহছ- لَمْ না-বোধক কর্তৃবাচক ।

তিন. عَلَّمَ (আল্লামা) তিনি শিখিয়েছেন। একবচন নামপুরুষ পুং লিঙ্গ। বহছ- অতীতকাল কর্তৃবাচক। এটার বাব تفعيل (তাফয়িল)। এ বাবের বিশেষত্ব হচ্ছে বিস্তারিত, অধিক বুঝানো। تعليم (তালিম) থেকে عَلَّمَ (আল্লামা) এসেছে। আমরা বাংলাদেশে যে 'তালিমুল কুরআন' করি, তাতে আসলে তালিম হয় না, শুধু না বুঝে তেলাওয়াত করা যায়। তালিম হল- বুঝে মর্মার্থ আয়ত্ব করার নাম। আর কোন আলিমের নামের আগে যে আল্লামা উপাধী আমরা দেখি, সেটা এ আল্লামা নয়। সেটা হল علامة(আল্লামাহ) অর্থাৎ- বিশেষজ্ঞ।

চার. لَمْ يَعْلَمْ (লাম ইয়ালাম) অর্থ- সে জানে না। একবচন নামপুরুষ পুং লিঙ্গ। এখানে  يَعْلَمْ শব্দের প্রথমে না-বোধক لَمْ এসে শব্দের শেষ হরফে সাকিন বা জঝম দিয়েছে। আসলে ছিল ইয়ালামু।

পাঁচ. عَلَّمْتَنَا (আল্লামতানা) এখানে نا(না) "আমরা" হচ্ছে ضمير (দমির) অর্থাৎ সর্বনাম। এখানে "আমাদের" অর্থ হবে। عَلَّمْتَ (আল্লামতা) তুমি শিখিয়েছ। একত্রে অর্থ হবে- তুমি আমাদের শিখিয়েছ।

ছয়. الْعَلِيمُ (আল আলীম) সর্ব জ্ঞানী।  إسم فاعل (ইসম ফায়েল)। বাব তাফয়িল। এটা বাব সামিয়া থেকে আসলে عالم (আলিম) জ্ঞানী অর্থ হবে। কোন মানুষ "আল আলীম" হতে পারে না। এটা আল্লাহর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট। মানুষ 'আলিম' হতে পারবে।

 

Saturday, July 27, 2013

দরস- চার


Iqra, Thuluth style




এক. পড়া,

দুই. শিক্ষা গ্রহণ করা এবং

তিন. সে অনুযায়ী কাজ করা।



এ তিনটি বিষয় এতটাই গুরুত্ববহ যে একে অবহেলা করলে আপনার জীবন পদে পদে বিপদে পড়বে এবং জীবনের শান্তি বলে কিছু থাকবে না।



আসুন! দেখি, কুরআন আমাদের এ বিষয়ে কী শিক্ষা দেয়।

  
Iqra, Thuluth, Mirror style, Calligrapher- Othman


এক. পড়া। কুরআনের নাযিলের প্রথম শব্দটি ছিল- "পড়"। আরবিতে শব্দটি হচ্ছে- ইকরা (إقرأ)। এটা মুসলিম হিসেবে আমরা প্রায় সবাই জানি। কিন্তু বাংলাভাষী হিসেবে এ শব্দটির বিধান সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই বেখবর এবং বেখেয়াল। তা নাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান আজ কুরআন পড়ে বুঝতেন।



একটা ছোট্ট ঘটনা বলি- আমার এক শ্রদ্ধেয় উস্তাদ তুরস্ক সফর শেষে দেশে ফিরছেন। উনার পাশে দু'সিটে টিনেজ মেয়ে বসেছে। উড্ডয়নের পর মেয়ে দু'জন তাদের হাতব্যাগ থেকে কুরআন বের করে পড়তে লাগল। কিছুক্ষণ পরে তিনি খেয়াল করলেন মেয়ে দু'টি কুরআন পড়ছে আর কাঁদছে। তিনি বিস্মিত হলেন। কারণ এ দু'মেয়ের মাতৃভাষা তুর্কী এবং এ ভাষার সাথে আরবি, বিশেষ করে কুরআনের ভাষার সম্পর্ক তেমন নেই। কুরআনের ভাষা শেখা ছাড়া একজন তুর্কীর পক্ষে কুরআন বুঝা সম্ভব নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কান্না সম্পর্কে। তারা জানালো ছোটবেলায় তারা কুরআন শিখেছে, তাই কুরআনের বানী তাদের কাঁদাচ্ছে। অর্থাৎ কুরআনের ভাষা তারা ছোটবেলায় শিখেছে।



ওস্তাদের তখন খুব দুঃখবোধ হতে লাগল এই ভেবে, বাংলাদেশের মানুষ কুরআন পড়ে কিন্তু কী পড়ে তা জানে না, তাই কুরআন তাদের কোনো কাজে লাগে না। এসব কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন আর আফসোস করেছিলেন।



বায়তুল মোকাররমে ইসলামী কিতাবের মেলা হয়। ওস্তাদের ঐ ঘটনার পর একদিন মেলায় গেলাম এবং প্রত্যেকটি স্টলে কুরআন শেখার বই চাইলাম। সবাই আমাকে সহীহ নুরানী তেলাওয়াত শেখার বই ধরিয়ে দিলেন। আমি ইংরেজী শেখার বইয়ের কথা বললে, তাদের মধ্যে মাত্র একজন দোকানদার ছাড়া কেউ আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন নাই। আমি সেদিন এতটাই দুঃখিত আর বিচলিত বোধ করি যে দ্রুত মসজিদের ভেতর গিয়ে বসে পড়ি এবং আমার কান্না পেতে থাকে।



Iqra bismi rabbika, Thuluth style, Calligrapher- Hamed Amedi


প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আল্লাহ আমাদের জন্য সর্বপ্রথম কোন নির্দেশটি দিয়েছেন কুরআন নাযিলের মাধ্যমে। আমরা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের কথা জানি। বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তক পড়ে রিচ্যুয়ালগুলো আদায় করি কিন্তু কুরআন পড়ে বুঝি না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালা কুরআনের প্রথম নির্দেশ দিয়েছেন - "পড়!" এবং এই পড়াটা কোন পদ্ধতি বা নিয়মে হবে তাও উল্লেখ করেছেন। সেটা হচ্ছে, "তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।"



আমরা বলি, পড়তে পারলে ত বুঝবে! অর্থাৎ- পড়া মানেই বোধগম্য হওয়ার বিষয়টি এসে যায়। কিন্তু কুরআন পড়ার ব্যাপারে কেন উল্টা ভাবি। আজ আমাদের শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাই কুরআন পড়ার অর্থ কুরআন তেলাওয়াত(না বুঝে উচ্চারণ করা) ভাবেন। অথচ কুরআন তেলাওয়াত করা মানে যে বোধগম্যতার বিষয় রয়েছে তাও বুঝেন না।



কুরআনে আমর(أمر) অর্থাৎ আদেশ এবং নাহি(نهي) অর্থাৎ নিষেধ বাচক শব্দ আছে, সেগুলোর বিধান হচ্ছে- ফরজ(فرض) অর্থাৎ- অবশ্য পালনীয়।



ইকরা (إقرأ) শব্দটি আমরের ছিগা(صغة)। আরবি ব্যকরণ অনুযায়ী একে- আমর হাদের(حاضر) মারুফ(معروف) এর একবচন ছিগা বা মধ্যম পুরুষ আদেশ বাচক অধ্যায়ের একবচনের একটি রূপ(ছিগা)। এখানে "পড়া"(قرأ) মূল ক্রিয়ারূপের পরিবর্তন হয়ে আদেশ বাচক অধ্যায়(বহছ بحث) আমর হয়ে আদেশবাচক অর্থ করবে- পড়।



সুতরাং নামাজ কায়েম করা যেমন ফরজ। যাকাত আদায় করা, রমাদানের সিয়াম আদায় করা এবং সামর্থবানদের হজ আদায় করা ফরজের মত "আল্লাহর নামে পড়া"ও ফরজ।



কুরআনে আল্লাহ আদেশ করছেন-

اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ ۖ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ ۗ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ

سورة العنكبوت - الآية 45

 "কিতাব থেকে তোমার প্রতি যা অহি করা হয়েছে, তা তেলাওয়াত কর অর্থাৎ পড় এবং সালাত(নামাজ) কায়েম(প্রতিষ্ঠা) কর। নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে।..."

  


اتْلُ(উতলু) অর্থাৎ তেলাওয়াত কর বা পড়। এটি আমরের ছিগা।

أَقِمِ(আকিম) অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা কর। এটি আমরের ছিগা।



কুরআনে যে শব্দটি আগে আসে, সেটির বিধানের কার্যকারিতাও আগে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অহি নাযিলের সাথে সাথে তা বারংবার তেলাওয়াত করতেন এবং সাহাবীদের মাধ্যমে লিখে রাখতেন। রাসূলের এই অধিক সতর্কতামূলক তেলাওয়াতের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা আদেশ দিলেন-



لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ (16) إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ (17) فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ

القيامة ১৬-১৮ আয়াত।



"আপনি তাড়াহুড়া করে আপনার জিহবাকে নাড়াবেন না। উহাকে(কুরআনকে) একত্রিত করা এবং পাঠের ব্যবস্থা করা আমার(আল্লাহর) দায়িত্ব। যখন আপনি কুরআন পড়বেন তখনই(সাথে সাথে) পাঠটি অনুসরন করুন।"



এখানেও আমর এবং নাহির ছিগা আছে।

আশা করি কুরআন পড়ার ফরজ বিষয়টি বুঝাতে পেরেছি , ইনশা আল্লাহ।