আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।



"প্রত্যেক আত্মাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।"
মৃত্যু পরবর্তি জীবনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার চিন্তা বয়সের সাথে সাথে মনের ভেতর জেকে বসছে।

কুরআন শেখা ফরজ। তেলাওয়াত উদ্দেশ্য নয়, কুরআন পড়ে মর্মার্থ উপলব্ধি করা। এটা বাচ্চাদের শেখানো এবং নিজে শেখা ফরজ। এই ফরজ ঠিক-ঠাক মত আদায় করতে পারলে ইনশা আল্লাহ কুরআনের সমাজ গঠনের কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

আসুন আমরা কুরআন শিখি, ইহকাল-পরকাল উজ্জ্বল করি।

Tuesday, July 30, 2013

দরস- পাঁচ

Allamal insana malam yalam, Thuluth style

দুই. শিক্ষা গ্রহণ করা

শিক্ষা এমনই একটি বিষয় যা জ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। আপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, জ্ঞান ছাড়া আপনার চলা সম্ভব নয়। জ্ঞান আহরণ করাকে শিক্ষা বলা হয়। এটা আমরা জানি। জ্ঞান কার কাছ থেকে এসেছে?

জ্ঞানের আরবি শব্দ হচ্ছে- علم (ইলম)।

কুরআনে বলা হয়েছে,   فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا " অতঃপর তিনি(আল্লাহ) জানেন যা তোমরা জান না।।" সুরা ফাতহ-২৭

عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ "তিনি (আল্লাহ) শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।" সুরা আলাক-৫

জ্ঞান কার কাছ থেকে এসেছে, তার জবাব পাওয়া গেল।

আমরা এবার একটু গভীরভাবে চিন্তা করব, আসলে জ্ঞানের বিষয়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আর কি বলেছেন!   

আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে খালিফা বা প্রতিনিধি পাঠাবেন, এজন্য ফিরিশতাদেরকে সেটা জানালেন। ফিরিশতারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে (জ্বীন জাতি পৃথিবীতে যে কর্মকান্ড করেছিল) মন্তব্য করল, তারা বিপর্যয় করবে, রক্তপাত ঘটাবে অর্থাৎ খালিফার দায়িত্ব তারা ঠিকমত পালন করবে না। এবং ফিরিশতারা যে দায়িত্ব পেয়েছে তা ঠিকমত পালন করছে। সুতরাং নতুন খালিফা পাঠানোর কি কারণ থাকতে পারে? কিন্তু আল্লাহ বললেন-  إِنِّي أَعْلَمُ مَا لاَ تَعْلَمُونَ (নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না) সুরা বাকারা-৩০

এরপর আসল বিষয়টি আমরা দেখতে পাবো, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জ্ঞানের বিষয়ে কী বলছেন-
وَعَلَّمَ آدَمَ الأَسْمَاء كُلَّهَا (আর আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম।) সুরা বাকারা-৩১

 এ আয়াতে একটি রহস্যের উন্মোচন করা হয়েছে। জ্ঞান হচ্ছে, প্রতিটি বস্তুর সম্যক পরিচিতি।

الأَسْمَاء (আল আসমা) শব্দটি বহুবচন, এর অর্থ নাম সমূহ। একবচন- إسم (ইসম) অর্থাৎ নাম।

আল্লাহ তায়ালা আদমকে নাম সমূহ শেখালেন। কিন্তু كُلَّهَا কেন বললেন? এখানেই আমাদের ভাবনার বিষয় রয়েছে।

كُلَّهَا এ শব্দের দুটো অংশ كُلَّ+هَا এর আক্ষরিক অর্থ- উহার(নাম সমূহের) প্রতিটি। আসলে এর অর্থ হচ্ছে- বিস্তারিত, পুঙ্খানুপুঙ্খ। যাকে আমরা বলি- এ টু জেড।

এখন গবেষণায় দেখা গেছে মানুষের জিন কোড হচ্ছে তথ্য ভান্ডার। এটা কে দিল? আপনারা জবাব পেয়েছেন নিশ্চয়ই।

আরেকটু খোলাশা করা যাক। আল্লাহ তায়ালা আদমকে বিস্তারিত জ্ঞান শেখানোর পর ফিরিশতাদের কাছে তাকে পাঠালেন এবং কিছু বিষয়ের তথ্য চাইলেন। ফিরিশতারা কি বলল?

قَالُواْ سُبْحَانَكَ لاَ عِلْمَ لَنَا إِلاَّ مَا عَلَّمْتَنَا إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ "তারা(ফিরিশতারা) বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।" সুরা বাকারা-৩২

অর্থাৎ- আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের মূল উৎস।

জ্ঞান আহরণের জন্য কোথায় যেতে হবে তা জানা হল।
 

Allamal insana malam yalam, Thuluth style


এবার একটু ভিন্ন বিষয় আলোচনা করা যাক, আরবি ভাষায় كلمة (কালিমা) শব্দ তিন প্রকার।

এক. إسم (ইসম) নাম বা বিশেষ্য বাচক।
দুই. فعل (ফিয়ল) ক্রিয়া বাচক।
তিন. حرف (হরফ) অব্যয় বাচক।

ইসম এরাব গ্রহণ করার দিক দিয়ে দু'রকম।
এক. معرب  (মুরাব), যে শব্দের প্রথমে আমেল আসার কারণে শব্দটির শেষ হরফে এরাবে পরিবর্তন হয়। এ বিষয়ে কিছু আলোচনা দরস দুই-এ আছে।
দুই.  مبني (মাবনি) এরাব পরিবর্তন হয় না।

ফিয়লও অনুরূপ। তবে হরফ হচ্ছে মাবনি।

এ দরসে আমরা ইলম থেকে অনেকগুলো শব্দ পেয়েছি।
এক. ক্রিয়া বাচক শব্দ عَلِمَ (আলিমা) অর্থ- তিনি জানেন।    এটি سمع-يسمع (সামিয়া-ইয়াসমাউ) বাব থেকে এসেছে। সিগাহ- واحد مذكر غائب (ওয়াহিদ মুযাক্কার গায়িব) এক বচন পুরুষ লিঙ্গ নাম পুরুষ। বহছ- فعل ماضي معروف (ফিয়ল মাদ্বি মারুফ) অতীতকাল কর্তৃবাচক ক্রিয়া। জিনস- সহিহ।

আপনারা এবিষয়ে আরো জানতে চাইলে "মিজানুস সরফ" নামক বইটি সংগ্রহ করতে পারেন। এখন এ ধরণের ব্যাকরণ বিষয়ক সব বই বাংলায় অনুবাদ পাওয়া যায়।

দুই. لَمْ تَعْلَمُوا (লাম তা'লামু) অর্থ- তোমরা জানো না। সিগাহ- جمع مذكر حاضر (জাময়া মুযাক্কার হাদির) বহুবচন মধ্যম পুরুষ পুং লিঙ্গ। বহছ- لَمْ না-বোধক কর্তৃবাচক ।

তিন. عَلَّمَ (আল্লামা) তিনি শিখিয়েছেন। একবচন নামপুরুষ পুং লিঙ্গ। বহছ- অতীতকাল কর্তৃবাচক। এটার বাব تفعيل (তাফয়িল)। এ বাবের বিশেষত্ব হচ্ছে বিস্তারিত, অধিক বুঝানো। تعليم (তালিম) থেকে عَلَّمَ (আল্লামা) এসেছে। আমরা বাংলাদেশে যে 'তালিমুল কুরআন' করি, তাতে আসলে তালিম হয় না, শুধু না বুঝে তেলাওয়াত করা যায়। তালিম হল- বুঝে মর্মার্থ আয়ত্ব করার নাম। আর কোন আলিমের নামের আগে যে আল্লামা উপাধী আমরা দেখি, সেটা এ আল্লামা নয়। সেটা হল علامة(আল্লামাহ) অর্থাৎ- বিশেষজ্ঞ।

চার. لَمْ يَعْلَمْ (লাম ইয়ালাম) অর্থ- সে জানে না। একবচন নামপুরুষ পুং লিঙ্গ। এখানে  يَعْلَمْ শব্দের প্রথমে না-বোধক لَمْ এসে শব্দের শেষ হরফে সাকিন বা জঝম দিয়েছে। আসলে ছিল ইয়ালামু।

পাঁচ. عَلَّمْتَنَا (আল্লামতানা) এখানে نا(না) "আমরা" হচ্ছে ضمير (দমির) অর্থাৎ সর্বনাম। এখানে "আমাদের" অর্থ হবে। عَلَّمْتَ (আল্লামতা) তুমি শিখিয়েছ। একত্রে অর্থ হবে- তুমি আমাদের শিখিয়েছ।

ছয়. الْعَلِيمُ (আল আলীম) সর্ব জ্ঞানী।  إسم فاعل (ইসম ফায়েল)। বাব তাফয়িল। এটা বাব সামিয়া থেকে আসলে عالم (আলিম) জ্ঞানী অর্থ হবে। কোন মানুষ "আল আলীম" হতে পারে না। এটা আল্লাহর জন্য খাস বা নির্দিষ্ট। মানুষ 'আলিম' হতে পারবে।

 

No comments:

Post a Comment